টিএ ৯১২ম্যানুয়াল মেমো ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস মালগাড়ি দুটি ট্রেনের কাছেই,তাহলে দুর্ঘটনার দায় কার!- উঠছে প্রশ্ন

সোমবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ২০২৩ সালের ২ জুন উড়িষ্যার বালেশ্বরের বাহানগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। তদন্ত করে সিবিআইও। উঠে আসে রেলকর্মীর গাফিলতি এবং সিগন্যাল বিভ্রাটের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।যদিও সোমবারের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি রেল।

মূলত, এনজেপি ছাড়ার পরে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল ট্রেন। রাঙাপানির কাছাকাছি এসে কিছুক্ষণের জন্য ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। তখনই পিছন থেকে ধাক্কা মারে মালগাড়ি। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে যখন ‘টিএ ৯১২’ অর্থাৎ ম্যানুয়াল মেমো দেওয়া হল, তখন মালগাড়ি কী ভাবে একই লাইনে চলে এল? রেল সূত্রের খবর, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতোই মালগাড়ির চালককেও ‘টিএ ৯১২’ কাগজ দেওয়া হয়েছিল। তাতেই উল্লেখ ছিল, কোন কোন সিগন্যাল ভেঙে গাড়ি চালাতে পারবেন চালক। কোথা থেকে কতটা অবধি এই ছাড়পত্র কার্যকর থাকবে, তারও উল্লেখ ছিল। মালগাড়ির দুই চালক ও গার্ডের কাছেও ছিল সেই ছাড়পত্র। রাঙাপানি থেকে চটের হাট পর্যন্ত মোট ৯টি লাল সিগন্যাল ভাঙার অনুমতি ছিল মালগাড়ির চালকের কাছে।

বিশেষত, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দিলে, স্টেশন মাস্টার টিএ-৯১২ নামে একটি লিখিত নোট জারি করেন। এর মাধ্যমে লোকো পাইলট অর্থাৎ ট্রেন চালককে সিগন্যাল মানার ক্ষেত্রে সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এমনটাই ঘটেছিল সোমবার। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাঙাপানি এবং আলুয়াবাড়ির মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ‘অকেজো’ ছিল! তাই ধীর গতিতে চলছিল দু’টি ট্রেনই। কিন্তু দু’টি ট্রেনের কাছেই যদি থেকে থাকে এই কাগজে লেখা অনুমতি, এবং তারা তা মেনেই চালিয়ে থাকেন, তাহলে তাহলে দায় কার! নিয়ম অনুযায়ী, টিএ-৯১২ অনুযায়ী ট্রেন চালানোর সময় দিনের বেলা ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো যায়। একই সঙ্গে, আগের গাড়ির সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিটের দূরত্বে পরের গাড়িকে যেতে হয়। রাতের বেলা বা কুয়াশা থাকলে ওই গতি ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় রাখতে হবে।

এ ক্ষেত্রে মালগাড়ির গতি বেশি ছিল ফলে টিএ-৯১২ ফর্মের সমস্ত নিয়ম চালক মেনেছিলেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার রাতে রেল বোর্ডের সিইও জয়া ভার্মা সিনহা তাঁর বিবৃতিতে বলেন, যে প্রাথমিকভাবে মালগাড়ির চালকের সিগন্যাল মানতে ত্রুটি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রেল আধিকারিক আরও জানান, মালগাড়িটিকে টিএ-৯১২ নোট দেওয়া হয়েছিল, নাকি লোকো পাইলট নিজেই লাল সংকেত লঙ্ঘন করেছিলেন তা তদন্তের পরেই জানা যাবে। জানা গেল, নোট ছিল তাঁর মালগাড়ির কাছেও। চালক তা মেনেই চালাচ্ছিলেন ট্রেন। তদন্তের আগেই কীভাবে চালকের উপর ‘দায় চাপাচ্ছে’ রেল, এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তুলেছে লোকো পাইলট সংগঠন, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে লোকো রানিংম্যান অর্গানাইজেশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here