বাঁকুড়া: দারকেশ্বর নদীর পাড়ে প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উঠল এক অমূল্য প্রত্নসম্পদ। নদী থেকে বালি তোলার সময় বালির নিচ থেকে উদ্ধার হল একটি বিরল দেবমূর্তি – দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুমূর্তি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রাথমিক অনুমান, মূর্তিটি একাদশ বা দ্বাদশ শতকের সময়কালে নির্মিত ও বাদামী বেলেপাথরে খোদাই করা।
ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের ওলা দুবরাজপুরের মন্দিরতলা এলাকায়। স্থানীয় শ্রমিকরা নদী থেকে বালি তোলার সময় হঠাৎ চোখে পড়ে পাথরের তৈরি মূর্তিটি। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় মানুষজন ছুটে আসেন ও মূর্তিটিকে নিরাপদে স্থানীয় এক মন্দিরে নিয়ে যান।
প্রত্নগবেষকরা জানিয়েছেন, মূর্তিটি প্রায় ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা ও ২ ফুট চওড়া। মূর্তির কেন্দ্রে দ্বাদশভূজ (১২ হাতে বিশিষ্ট) বিষ্ণুদেবের প্রতিকৃতি, তাঁর দু’পাশে রয়েছে আয়ুধধারী পুরুষমূর্তি ও শ্রীদেবী-ভূদেবীর মূর্তি। মূর্তিতে কীরিট, কর্ণকুন্তল, বরমালা, যজ্ঞোপবিত – সবই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান ও প্রায় অক্ষত, যা একে শিল্প ও ইতিহাস – উভয় দিক থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করছে।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, বহু বছর আগে এই এলাকায় ছিল এক প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির। মন্দিরটি এখন বিলুপ্ত হলেও, এলাকার নাম আজও “মন্দিরতলা” হিসেবেই পরিচিত। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মূর্তিটিই ছিল সেই হারিয়ে যাওয়া মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ, যা দারকেশ্বর নদের ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল।
এবার সেই হারিয়ে যাওয়া মূর্তি পুনরুদ্ধার হওয়ায় এলাকায় বইছে উৎসবের আমেজ।
স্থানীয় মানুষ ও ইতিহাস গবেষকরা মূর্তিটির সঠিক সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যাতে এই অমূল্য প্রত্নসম্পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল হয়ে থাকতে পারে।
এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, বাঁকুড়া জেলার মাটি আজও লুকিয়ে রেখেছে বহু অজানা ইতিহাসের চিহ্ন।