শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা ‘জন্মাষ্টমী’ হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে প্রতি বছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। তবে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন জন্মাষ্টমী পালন করা হয়? এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তাৎপর্য।
পুরাণ মতে, দুষ্টকংসের অত্যাচারে সমগ্র মথুরা কেঁপে উঠেছিল। ঠিক সেই সময়ে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন কংসের কারাগারে, মা দেবকী ও বাবা বসুদেবের ঘরে। জন্ম থেকেই কংসের হত্যাযজ্ঞ রুখে মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। তাই জন্মাষ্টমীকে শুধু কৃষ্ণজন্ম উৎসব নয়, অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক হিসেবেও মানা হয়।
শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের কাছে প্রেম, ভক্তি, ন্যায়, সত্য ও ধর্মরক্ষার প্রতীক। তাঁর গোপাল রূপ শৈশবের নিষ্পাপ আনন্দের প্রতীক, আবার মহাভারতের সারথি রূপে তিনি জীবনের ন্যায়নীতির শিক্ষাদাতা। জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে ভক্তরা স্মরণ করেন তাঁর উপদেশ, বিশেষ করে ‘ভগবদ্গীতা’র বাণী— “যখনই ধর্মের অবনতি হয়, তখনই আমি আবির্ভূত হই।”
এই দিনে বহু ভক্ত উপবাস করে রাতভর ভজন, কীর্তন, গীতা পাঠ করেন। মধ্যরাতে কৃষ্ণের জন্মমুহূর্তে আরতি, পুজো ও মহোৎসবের আয়োজন হয়। মন্দিরে সাজানো হয় শ্রীকৃষ্ণের পালঙ্ক, দোলনা ও জন্মদৃশ্য। বাড়িতেও ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মলীলার প্রতীকী আয়োজন করেন।
জন্মাষ্টমী শুধু ভক্তিমূলক উৎসব নয়, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীকও। ভক্তরা মনে করেন, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে মানুষকে শিখিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ও সত্যের জন্য লড়তে। আজও এই উৎসব মানুষকে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও শান্তির শিক্ষা দেয়।
জন্মাষ্টমী পালিত হয় কারণ এটি সেই দিন, যেদিন মানবজাতিকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাই এই দিনটি ভক্তদের কাছে শুধু এক উৎসব নয়, বরং ন্যায়, সত্য ও ভক্তির অমর প্রতীক।