রাজনীতির মঞ্চে তাঁর ঝকঝকে উপস্থিতি, সুঅভিনয়, ও চৌকস বাকপটুতা বরাবরই তাঁকে নজরকাড়া করে তুলেছে। তিনি তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। কিন্তু এ বার আলোচনার কেন্দ্রে রাজনীতি নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। একেবারে চুপিসারে, সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে জার্মানির বার্লিন প্রাসাদের ছাদে রাজকীয় পরিবেশে গাঁটছড়া বাঁধলেন মহুয়া ও পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্র।
পাঁচ তারার হোটেল নয়, কোনও মণ্ডপও নয়—বরং ইতিহাস-স্মৃতিতে মোড়া বার্লিন প্রাসাদের ছাদই হয়ে উঠল এই দুই প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার মিলনের সাক্ষী। ঘনিষ্ঠ মহলে কানাঘুষো চললেও, খবরটি সামনে আসতেই তা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনৈতিক মহলে।
বিয়ের ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল। নবদম্পতির উজ্জ্বল মুখ, হাসিমুখে ক্যামেরাবন্দি মুহূর্ত—সব মিলিয়ে নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। পিচ-গোলাপি ও সোনালি জরির শাড়িতে মহুয়া ছিলেন অনবদ্য। গাঢ় হার, টিকলি ও দুলে সাজ ছিল সম্পূর্ণ। পিনাকীর পরনে ছিল সাদা কুর্তা ও সোনালি জ্যাকেট—দুজনকেই একসঙ্গে দেখতে ‘পারফেক্ট কাপল’ বলেই মনে করছে সকলে।
৫১ বছরের মহুয়া ও ৬৫ বছরের পিনাকী, দু’জনেরই এটি দ্বিতীয় বিবাহ। এক সময় কংগ্রেসেই রাজনৈতিক পথচলার শুরু দুজনের। ২০০৯ সালে জেপি মর্গ্যানের চাকরি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন মহুয়া। রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’ শিবিরেই নজর কাড়েন তিনি। পরে ২০১০ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০১৬ সালে করিমপুর থেকে প্রথমবার বিধায়ক হন। ২০১৯ ও সদ্যসমাপ্ত ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, পিনাকী মিশ্র ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে পুরী থেকে সাংসদ হন। পরে তিনি বিজু জনতা দল (BJD)-এ যোগ দেন এবং ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে পরপর বিজয়ী হন। তবে ২০২৪-এ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় রাজনীতি থেকে খানিক দূরেই সরে যান তিনি।
মহুয়া ও পিনাকীর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব শেষ পর্যন্ত রূপ পেল পরিণয়ে। রাজনীতি থেকে ব্যক্তিগত জীবনের এই পর্ব ঘিরে ইতিমধ্যেই শুভেচ্ছার বন্যা বইছে। তবে এই বিয়ে আবারও প্রমাণ করে দিল—রাজনীতির জটিল সমীকরণের বাইরেও মানবিক সম্পর্কের জায়গা এখনও অটুট।