ফের বাংলায় ফিরতে চলেছে কনটেনমেন্ট জোন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে!

পরিস্থিতি যে ক্রমশ কঠিন হচ্ছে সেটা মুখে স্বীকার না করলেও এবার মোদি সরকার কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ঠেকাতে হাতে সময় নিয়েই কোমর বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে। আর ঠিক সেই কারনেই তাঁরা এবার রাজ্য সরকারগুলির হাতে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিল।

মঙ্গলবার কেন্দ্র সরকারের তরফে রাজ্যগুলিকে এক নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে এই মর্মে যা পেয়েছে নবান্নও। সেই নির্দেশিকাতেই বলা হয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে রাজ্য সরকারগুলি স্থানীয় ভাবে প্রয়োজনবোধে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করতে পারবে। কোনও এলাকায় সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হলে সেই এলাকায় কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করতে পারবে রাজ্য সরকার। তবে এই বিধি বলবৎ থাকবে আপাতত শুধু এপ্রিল মাসেই। পরে পরিস্থিতি কি দাঁড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখে কেন্দ্র সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ওই নির্দেশিকায় লকডাউনের কোনও উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলা সহ গোটা দেশেই যে নতুন করে আবারও সংক্রমণ বাড়ছে সেটা সবাই বুঝতেও পারছে। যদিও আমজনতার মধ্যে এই নিয়ে কোনও উদ্বেগ ধরা পড়ছে না। অনেকেই মাস্ক ছাড়া অবাধেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নূন্যতম শারীরিক দূরত্বটুকুও তাঁরা বজায় রাখছেন না। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর এই স্বাস্থ্যবিধি না মানার জেরেই কার্যত দেশজুড়ে বেড়ে চলেছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বার বার সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, কোভিডের এই দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউ অপেক্ষা আরও বেশি শক্তিশালী হবে। প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা তিনগুণ পর্যন্ত হতে পারে। আর তাই সময় থাকতে থাকতেই দেশজুড়ে কেন্দ্র সরকার সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে এগোতে চাইছে। কেন্দ্র বা কোনও রাজ্য সরকারই চাইছে না ফের লকডাউন ফেরাতে। আর তাই এখন থেকেই কড়াকড়ি ভাবে চালু করে দেওয়া হচ্ছে কনটেনমেন্ট জোন গড়ে সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যবস্থা।

মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে রাজ্য সরকারকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলি প্রয়োজনে ওয়ার্ড, ব্লক, শহর বা জেলা পর্যায়ে স্থানীয় ভাবে সব ধরনের গতিবিধিতে বিধি-নিষেধ জারি করতে পারবে। ১ এপ্রিল থেকে এক মাসের জন্য ওই নিয়ম দেশ জুড়ে চালু হবে। কোনও এলাকায় সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হলে, তাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবেও ঘোষণা করতে পারবে রাজ্যগুলি। তবে এই নির্দেশিকায় কোথাও লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ রাজ্য সরকার যে এলাকায় কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করবে সেখানে সব বাজারদোকান বন্ধ থাকবে, সমস্ত রকমের যান চলাচল বন্ধ থাকবে, মানুষের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রীত হবে। একই সঙ্গে ওই এলাকায় থাকা যাবতীয় সরকারি ও বেসরকারি অফিস, শপিং মল, স্কুল-কলেজ, ধর্মীয়স্থান সব বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে বাংলা সহ প্রতিটি রাজ্যে কোভিড টেস্ট বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়াতে বলা হয়েছে আরটিপিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজ়েন পরীক্ষাও। সেই সঙ্গে রাজ্যের প্রতিটি কনটেনমেন্ট জোন ও তার পাশের বাফার জ়োনের বাসিন্দাদের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে। কন্টেনমেন্ট এলাকায় কোভিড-বিধি বা পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্বে থাকবেন জেলা আধিকারিক, পুলিশ ও পুরকর্মীরা। জোর দেওয়া হচ্ছে যাতে সকলে মাস্ক পরেন সে বিষয়ে। খোলা জায়গায় বা কাজের জায়গায় কেউ মাস্ক না-পরলে, জরিমানা নিতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে।

মঙ্গলবার রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর যে কোভিড রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে বলা হয়েছে বিগত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০৪জন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেইও আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৩জন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ১২৬জন। গত ২৪ ঘন্টায় মারা গিয়েছেন ২জন। একজন কলকাতার অন্যজন উত্তর ২৪ পরগনার। এটা ঠিক যে গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃতের হার এখনও খুব কম। কিন্তু সতর্ক না হলে এটাই কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে বেশি সময় লাগবে না। আর তাই বাংলায় ফের কনটেনমেন্ট জোন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলাতেই এই কনটেনমেন্ট জোন জারি হতে পারে এপ্রিল মাসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here