অবশেষে ছুটি পেলেন মহারাজ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বাঙালি। নিউ আলিপুরের উডসল্যাণ্ড হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বেহালার বাড়িতে চলে এলেন ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’ সৌরভ গাঙ্গুলি। আর তার জেরেই কার্যত দুশ্চিন্তামুক্ত হল বাঙালি সহ ক্রিকেট দুনিয়া।এদিন তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন ডোনা গাঙ্গুলি। আপাতত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই থাকবেন ‘মহারাজ’।তবে এদিন হাসপাতাল ছাড়ার মুহুর্তে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সৌরভ জানিয়ে দেন তাঁর ওপর কোনই চাপ ছিল না যা থেকে তাঁর অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে। যার অর্থ তাঁর অসুস্থতার পিছনে গেরুয়া শিবিরের কোনও ভূমিকা নেই।
প্রসঙ্গত,গত শনিবার সকালে জিম করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান সৌরভ। এরপরে শরীরে অস্বস্তি দেখা দেওয়ায় তিনি ভর্তি হন উডল্যান্ডস হাসপাতালে। প্রথমে জানা গিয়েছিল মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে ভারতের ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়কের। এমনকি তাঁর হৃদপিণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৩টি আর্টারিতে ব্লক হওয়ার কথাও জানা যায়।সৌরভের এই অসুস্থতার জেরে বাংলায় তো বটেই দেশের ক্রিকেট ও রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।এরপরই শনিবার সৌরভের প্রথম অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়। একটি আর্টারিকে ব্লকমুক্ত করা হয়।সেদিনই তাঁকে দেখতে হাসপাতালে চলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরভের চিকিৎসার জন্য ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডও তৈরি হয়। এমনকি দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক দেবী শেঠী পর্যন্ত বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় এসে সৌরভের চেকআপ করেন। এমনকি তিনি এটাও জানিয়ে দেন সৌরভের হার্ট অ্যাটাক হয়নি। তবে হার্ট অ্যাটাকের মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। সৌরভের যে এখনই কোনও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি আর হচ্ছে না সেটাও তিনি জানিয়ে দেন।
দেবী শেঠীর এই ঘোষণার পর থেকেই আগ্রহ তুঙ্গে উঠেছিল আমজনতার যে, সৌরভ তাহলে কবে ছাড়া পাবেন হাসপাতাল থেকে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল বুধবারই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন ‘দাদা’।কিন্তু সূত্রের খবর, সৌরভ নিজেই আরও একটা দিন হাসপাতালে থেকে যেতে চাওয়ায় তাঁর ছুটি একদিন পিছিয়ে আজকের তারিখে করা হয়। সেই মতো এদিন সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতালে চলে আসেন তার স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলি। এরপর বেলা ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ এসকর্টে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ির পথে ধরেন মহারাজ।তবে যাওয়ার আগে হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিক ও জনতার উদ্দেশ্যে সৌরভ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করেন।এছাড়াও তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য তিনি চিকিৎসক ও নার্সদেরও ধন্যবাদ জানান।তিনি আরও বলেন, খুব দ্রুতই কাজে ফিরবেন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে বারবার সৌরভের অসুস্থতার জন্য যে ‘মানসিক চাপ’কে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল, এদিন তাও স্পষ্ট করে দেন মহারাজ। সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘আপনার উপর কি কোনও চাপ ছিল’, হাত নেড়ে তিনি জবাব দেন, ‘একেবারেই না’। অর্থাৎ গেরুয়া শিবিরের দিকে যে অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছিল তা কার্যত নিজেই খন্ডন করে দিলেন ‘দাদা’। একই সঙ্গে এটাও বোঝা গেল, খুব শীঘ্রই সৌরভের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের সম্পর্কেই বিচ্ছেদ ঘটছে না। বাংলা হয়তো আগামী দিনে তাঁকে অন্য কোনও ভূমিকাতেও দেখতে পারে আশাবাদী রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।